কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের সূচনা করার অব্যবহিত পরেই শ্রীল প্রভুপাদ তাঁর জনবর্ধমান পারমার্থিক প্রতিষ্ঠানের এক অপরিহার্য অঙ্গরূপে শ্রীবিগ্রহ উপাসনার বিধি- নিয়মের প্রকাশ করেন। ঠিক যেমন শ্রীকৃষ্ণের বাণী তথা শাস্ত্রের বাণীকে অবিকৃত রেখে তিনি যথাযথভাবে উপস্থাপন করেছেন, তেমনই শ্রীবিগ্রহ পূজার প্রণালী ও শাস্ত্রীয় বিধি- নিয়মের অনুকূলে চিরাচরিত প্রথায় অবিকৃতভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি শ্রীবিগ্রহ পূজাকে কৃষ্ণভাবনামৃতের মূল নীতি প্রত্যেককে কৃষ্ণভক্তি দান করার একটি মাধ্যম হিসাবে দেখেছিলেন। শ্রীল প্রভুপাদ চেয়েছিলেন যে, শ্রীবিগ্রহ অচনের ক্ষেত্রে ইস্কন যেন আদর্শ বিধি-নিয়ম অনুসরণ করে। তিনি বিশেষভাবে চেয়েছিলেন যে, বিগ্রহ পূজার্চনার ক্ষেত্রে ইসকনে যেন খুব উন্নত মান অবলম্বন করা হয়। এবং তার উৎকর্ষতা যেন ক্রমেই অধিক। থেকে অধিকতর রূপে বৃদ্ধি পায়; কোনভাবেই যেন তা হ্রাস না পায়। তার ফলে শ্রীকৃষ্ণ প্রসন্ন হবেন এবং কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন বর্ধিত হতে থাকবে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে গোস্বামীগণ শ্রীবিগ্রহ পূজার্চনার যে বিধান দিয়ে গিয়েছেন, শ্রীল প্রভুপাদ ইসকনে সেটিরই প্রযোগ করেছেন। এটি ‘পাঞ্চরাত্রিক’ পূজাবিধি নামে খ্যাত। তিনি বলেছেন যে, এই পঞ্চরাত্র বিধি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সমস্ত বৈষ্ণবদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শ্রীবিগ্রহ পূজার্চনার জন্য পাঞ্চরাত্রিক বিধিই হচ্ছে সবচাইতে প্রামাণিক এবং ব্যবহারিক; কলহের যুগ এই কলিযুগের জন্য তা অত্যন্ত উপযোগী। আধুনিক যুগের জন্য এই বিধি বেদান্তের থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা শ্রীবিগ্রহ অর্জনের ক্ষেত্রে কখনই স্মার্ত ব্রাহ্মণদের কর্মকাণ্ডীয় পন্থার অনুসরণ করেন না। তাই শ্রীল সনাতন গোস্বামীপাদ তাঁদের জন্য শুদ্ধ শাস্ত্রীয় বিধি-বিধান অনুসারে হরিভক্তিবিলাস’ নামক গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেছেন। আর শ্রীল রূপ গোস্বামীপাদ তাঁর ‘ভক্তিরসামৃত-সিন্ধু’ গ্রন্থে চৌষট্টি প্রকার তক্তাঙ্গ তথা ভক্তিমূলক ক্রিয়াকলাপের বিধি রচনা করে গিয়েছেন, যাতে ভগবানের সেবায় সাধন-ভক্তি অনুশীলনের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ভক্ত তার ইন্দ্রিয়সমূহ নিয়োজিত করতে পারে। এই চৌষট্টি প্রকার ভাষ্যঙ্গের মধ্যে আবার তিনি পাঁচটিকে প্রধানতম রূপে বিবেচনা করেছেন। সেগুলি হলো, ১) শ্ৰীমদ্ভাগৰত শ্রবণ, ২) ভক্ত-সঙ্গ, ৩) মথুরা আদি ভগবদ্ধামে বাস, ৪) ভগবানের পবিত্র নাম জপ, ৫) গভীর বিশ্বাস সহকারে ভগবানের বিগ্রহ স্বরূপের সেবা। বস্তুত, এই একটি মাত্র বিষয়। শ্রীবিগ্রহ অর্জন, তাকেই চৌষটি প্রকার ভষ্ণাঙ্গ তথা সাধনাঙ্গে বিস্তারিত করা হয়েছে। সুতরাং, ভক্তি জীবনে শ্রীবিগ্রহ অর্জনের এই অপরিসীম গুরুত্বের কথা বিবেচনা করেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শাস্ত্র ও মহাজনগণের সিদ্ধান্তের অনুকূলে “পঞ্চরাত্র-প্রদীপ” নামক এই গ্রন্থটি প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে বৈষ্ণব ভক্ত তথা সাধক ফুল তার আশ্রয় গ্রহণ করে পারমার্থিক জীবনে প্রভূত উন্নতি সাধন করতে পারেন।
B
ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট
ISBN 978-93-86956-37-8 90000 >
PANKAJ KUMAR SARKAR (verified owner) –